সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. বহির্জাত ও আন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলতে কি বোঝো?
উত্তর : যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর উপরিভাগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ভূপৃষ্ঠে ক্রিয়া করে সেই পদ্ধতিতে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে। যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর ভূগর্ভে বিভিন্ন প্রকার অভ্যন্তরীণ শক্তি ক্রিয়া করে সেই পদ্ধতিকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে।
২. সমপ্রায় ভূমি কাকে বলে?
উত্তর : নদীর জলপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি এবং উচ্চভূমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচু-নীচু ঢেউ-খেলানো ভূমি বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাদের সমপ্রায় ভূমি বলা হয়।
৩. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলতে কী বোঝো?
উত্তর : যখন কোন বিস্তৃর্ণ মালভূমি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির দ্বারা কতগুলি অংশে বিভক্ত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে তখন সেই মালভূমি গুলিকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে। যেমন
– ছোটনাগপুর মালভূমি।
৪. পর্বত বেষ্টিত মালভূমি কাকে বলে?
উত্তর : দুই বা ততোধিক পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে কোন মালভূমি অবস্থান করলে সেই মালভূমিকে পর্বত বেষ্টিত মালভূমি বলে। যেমন তিব্বতীয় মালভূমি।
৫. প্লাবন সমভূমি বলতে কি বোঝো?
উত্তর : নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অপেক্ষাকৃত মসৃণভূমি যা নদীর উপচে পড়া জলরাশি বা প্লাবনের ফলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে।
৬. অ্যাসথেনাস্ফিয়ার বা ক্ষুধমণ্ডল কাকে বলে?
উত্তর : Asthenosphere’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Asthenica থেকে, যার অর্থ দুর্বল’ এবং ‘Sphere’-এর অর্থ মণ্ডল। অর্থাৎ, অ্যাসথেনােস্ফিয়ার হল দুর্বলমণ্ডল। ভূত্বকের নীচে গড়ে 150 – 200 কিমি পুরু ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলের অন্তর্গত সান্দ্র, দুর্বল ও নমনীয় প্রকৃতির পরিবর্তনশীল স্তরকে অ্যাসথেনােস্ফিয়ার বলে। পাতগুলি এই স্তরের উপর ভাসমান অবস্থায় আছে। এখানকার ম্যাগমার পরিচলন স্রোতের কারণে পাতের চলন ঘটে, অগ্ন্যুৎপাত হয়, ভূমিকম্প হয়। তাই এই স্তরকে ক্ষুধমণ্ডল বলে।
৭. সমস্থিতিক আলোড়ন (Isostatic Movement) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : গ্রিক শব্দ ‘lso’ = সম এবং Static = স্থির। অর্থাৎ, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত বিভিন্ন উঁচু-নিচু স্থান যেমন পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতি পরস্পরের মধ্যে উচ্চতাগত সাম্য অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করে, তাকে সমস্থিতিক আলােড়ন বলে।
৮. ইউস্ট্যাটিক আলোড়ন (Eustatic Movement) বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : সমুদ্রবক্ষের জলধারণ ক্ষমতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে সমুদ্রপৃষ্ঠের যে উত্থান ও অবনমন ঘটে, তাকেই সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন বা ইউস্ট্যাটিক আলােড়ন বলে। যেমন প্রতিসারী পাতসীমান্তে সমুদ্রবক্ষের বিস্তার ঘটে ও জলধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ নেমে যায়। আবার, অভিসারী পাতসীমান্তে সমুদ্রবক্ষ সংকুচিত হওয়ায় জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে সমুদ্রবক্ষ উখিত হয়।
৯. পর্বতের বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তর : পর্বতের উচ্চতা সাধারণত 1000 মিটারের বেশি হয়।
পর্বতগুলি বহুদূর বিস্তৃত হয়।
পর্বতের ঢাল খুব খাড়া হয়।
পর্বতগুলি সুউচ্চ শৃঙ্গবিশিষ্ট ও গভীর গিরিখাতবিশিষ্ট।
পর্বতের ভূমিরূপ অত্যন্ত বন্ধুর প্রকৃতির।
১০. পাত (Plate) কী?
উত্তর : অ্যাসথেনােস্ফিয়ারের উপর ভাসমান ও চলনশীল শিলামণ্ডলের শক্ত ও কঠিন খণ্ডগুলিকে পাত বলে। 1956 খ্রিস্টাব্দে কানাডার ভূ-পদার্থবিদ জে. টি. উইলসন প্রথম পাত বা Plate শব্দটি ব্যবহার করেন। ভূত্বকে 7টি বড়াে পাত, ৪টি মাঝারি পাত ও 20টিরও বেশি ছােটো পাত আছে।
উদাহরণ : ইউরেশীয় পাত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত প্রভৃতি।
১১. অপসারী বা প্রতিসারী পাতসীমানা কাকে বলে?
উত্তর : যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে, তাকে অপসারী বা প্রতিসারী পাতসীমানা বলে। এই পাতসীমানায় নতুন ভূমিরূপের উৎপত্তি হয় বলে একে গঠনকারী পাতসীমানা বলা হয়।
১২. অভিসারী পাতসীমানা কাকে বলে?
উত্তর : যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের দিকে। অগ্রসর হতে থাকে, তাকে অভিসারী পাতসীমানা বলে। এই পাতসীমানায় ভূত্বকের কিছুটা অংশ ধ্বংস হয় বলে একে ধ্বংসাত্মক পাতসীমানা বলা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ